মাগুরার ছেলে আকাশ (ছদ্মনাম)। সেখানেই তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়, এরপর গ্রামের বাড়ি থেকে ২০১০ সালে উচ্চাশিক্ষার জন্য ঢাকায় আসে আকাশ। গ্রামের তার সময় কাটত আর পাঁচটা সাধারণ ছেলের মতোই কিন্তু ঢাকায় আসার পর নতুন পরিবেশে বেশ একা হয়ে পড়ে আকাশ।
সে ঢাকার একটি বেসরকারি কলেজে ভর্তি হয়। এরপর আকাশ তার একাকিত্ব কাটানোর জন্য এক বন্ধুর পরামর্শে আসক্ত হয়ে পড়েন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। তারপর হঠাৎই এক অপরিচিত মেয়ের আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে আকাশের কাছে।
আকাশ ভাবলো তার পরিচিত কেউই হবে হয়তো। তাই সে রিকোয়েস্টটা একসেপ্ট করে এরপর সেই আইডি থেকে মেসেজ আশে আকাশের কাছে। প্রথমে হাই, হ্যালো এরপর পরিচয় হয় অচেনা আইডির মেয়েটির সাথে।
ওই আইডির মেয়েটি নিজেকে রিনা (ছদ্মনাম) নামে পরিচয় দেন। তারপর রিনার সাথে ফেসবুকে মেসেজে আদান-প্রদানের এক পর্যায়ে ফোন নম্বর দেয় রিনা। রিনা জানায় তার বাড়িও মাগুরায়। এরপর থেকে ফোনে কথা শুরু হয় রিনা ও আকাশের। তারা দিনে সাত ঘন্টার মতো সময় একে অপরের সাথে কথা বলে পার করতো। পাশাপাশি তারা আর বেশ কিছু সময় মেসেজে আড্ডা দিতো। এক পর্যায়ে তাদের সম্পর্ক আরও গভীর হয়।
এরপর কিছুদিন অতিবাহিত হলে রিনা আকাশকে নিজের বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপের কথা জানান আর বলেন আকাশকে তার অনেক পছন্দ। কিন্তু আকাশ আপত্তি জানিয়ে বলেন সে রিনাকে খুব ভালো বন্ধু মনে করে। রিনার সাথে তার প্রেম করা সম্ভব না। কিন্তু বাঁধ সাধে রিনা। সে আকাশকে জানায় তার বাবা নেই। মা নিয়ে সে খুব কষ্টে সংসার চালায়। আর আকাশকে সে খুবই পছন্দ করে। কিন্তু তারপরেও আকাশ না বললে রিনা আকাশকে তার সঙ্গে দেখা করতে বলে এবং এক সময় আকাশ তার গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পথে রিনার সাথে দেখা করে।
এ সময় রিনাকে দেখে এবং তার চাতুরতায় রিনার প্রেমে পড়ে যায় আকাশ। শুরু হয় তাদের নতুন পথচলা। এরপর মাঝে মাঝে রিনার আকাশকে তাদের বাড়িতে আসতে বলতো এবং কিছুদিন যাওয়ার পর রিনা তার মায়ের সাথে আকাশকে পরিচয় করিয়ে দেয়। এরপর আকাশ রিনার মায়ের সাথেও মাঝে মধ্যে কথা বলতো।
রিনার মা আকাশকে জানায় তার কাছেই রিনাকে বিয়ে দিবে সে কিন্তু আকাশকে ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে। এরপর আকাশ একদিন তার এক বন্ধুর কাছ থেকে জানতে পারেন রিনার সাথে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে তারও। এ সময় আকাশ মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে কিন্তু বিষয়টা রিনাকে জিজ্ঞেস করলে রিনা এটি অস্বীকার করে।
কিন্তু পরে রিনা বিষয়টি মেনে নিয়ে ক্ষমা চায় আকাশের কাছে। এরপর আকাশও ক্ষমা করে দেয় রিনাকে। এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে আকাশ ও রিনা। রিনা নানান কারণে আকাশকে বাসায় ডাকে এবং আকাশের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এভাবে তারা সময় পার করতে থাকে। তারা অবাধ মেলামেশা করলেও রিনার মা কখনো আকাশকে কিছুই বলতো না।
এরপর রিনার ঢাকায় আশে এবং একটা কোচিং এ ভর্তি হয়। এসময় তারা সংসদ ভবন এলাকা, ধানমন্ডি, হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন স্থানে আড্ডা দেওয়া শুরু করে। একপর্যায়ে রিনার প্ররোচণায় নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে আকাশ। রিনা নানা সময় আকাশকে কৌশলে শারীরিক সম্পর্কের আহ্বান জানায় এবং নেশাগ্রস্থ করে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে।
কিছুদিন যাওয়ার পর হঠাৎ রিনা আকাশকে ফোন দিয়ে শপিং করবে বলে মার্কেটে আসতে বলে। আকাশ গেলে রিনা তার কাছে শপিং করার জন্য ১০হাজার টাকা দাবি করেন এবং আকাশ টাকা নাই বললে রিনা আকাশকে তার একটি নগ্ন ছবি দেখিয়ে বলেন ‘আমি যা বলবো তাই করবা, না হলে এই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিব’। এরপর আকাশ কোন উপায়ান্তো না পেয়ে পকেটে থাকা তিন হাজার টাকা দিয়ে দেয় রিনাকে। এরপর বাসায় আসলে রিনা আকাশের কাছে আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। বলে টাকা না দিলে রিনা আকাশের নামে ধর্ষণ মামলা করবে।
এরপর কোন উপায় ভেবে না পেয়ে আকাশ রিনার মাকে ফোন দিয়ে পুরো ঘটনা জানালে রিনার মা আকাশকে উল্টো টাকা দিয়ে দিতে বলে, না হলে সেও মামলা করার হুমকি দেয়। এরপর আকাশ নিজের ক্যামেরা বিক্রি করে রিনাকে ত্রিশ হাজার টাকা দেয় এবং তার কাছে আর কোনও টাকা নেই বলেও জানায়। এই ঘটনার পর মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে আকাশ। তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।
(এই লেখাটি বেসরকারি একটি টেলিভিশনের ফাঁদ অনুষ্ঠানের অবলম্বনে করা)